সিজোফ্রেনিয়ার রোগের লক্ষণ I সিজোফ্রেনিয়ার রোগ থেকে মুক্তির উপায়

 সিজোফ্রেনিয়ার রোগের লক্ষণ-সিজোফ্রেনিয়া এমন একটি রোগের নাম যেটিকে বলা হয় একটি জটিল মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিন্তা চেতনায় অস্বাভাবিক কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্তদের মধ্য কাল্পনিক চিন্তাধারা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যেও হ্যালুসিনেশন এর মত কার্যকলাপ গুলো ঘটে। সিজোফ্রেনিয়ার রোগীর এইসব দিকগুলোকে সাইকোটিক ডিজঅর্ডার বলা যায়।

সিজোফ্রেনিয়ার রোগের লক্ষণ I সিজোফ্রেনিয়ার রোগ থেকে মুক্তির উপায়


এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা মনে করে যে তারা সুস্থ সবল আসলে এদের মধ্য মানসিক রোগ বাসা বেধেছে এটা তারা মানতে চায় না। এই রোগে আক্রান্তদের আচরণগুলো দিন দিন পরিবর্তন হতে থাকে। এরা কারো সাথে তেমন ভাবে মিশতে চায় না অনেক সময় একা থাকতে বেশি পছন্দ করে। এরা কাল্পনিক জগতকে বাস্তবের সাথে গোলমাল করে ফেলে। সিজোফ্রেনিয়ার রোগের যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।

সিজোফ্রেনিয়ার রোগ কি এই রোগ কাদের হতে পারে এর লক্ষণ কি এর চিকিৎসা কি এসব বিষয়ে অনেকের জানার কৌতূহল থাকে যার কারণে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অনলাইনে এসব বিষয়ে জানার জন্য সার্চ করে থাকেন অনেকেই। সিজোফ্রেনিয়ার রুম নিয়ে জানার যাদের ইচ্ছে রয়েছে তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলে সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। যারা এই রোগ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ে এই সম্পর্কে জেনে নিন এবং আমাদের সাথে থাকুন।

সিজোফ্রেনিয়া রোগ কি

সিজোফ্রেনিয়ার রোগ এমন একটি রোগ যা একজন ব্যক্তির মানসিক চেতনাকে আক্রান্ত করে তার স্বাভাবিক চিন্তাধারাকে ব্যাহত করে। ১৮৮৭ সালে জার্মান মনও চিন্তাবিদ এম এল ক্রিপলিন সর্বপ্রথম এই রোগ নির্ণয় করেন। ইউগেন ব্লুয়ার‌ ১৯১১ সালে সর্বপ্রথম এই রোগের নামকরণ (সিজোফ্রেনিয়া) করেন। এই রোগ এমন একটি রোগ যা রোগীকে বুঝতে দেয় না যে সে কোন একটি রোগে আক্রান্ত রয়েছে এবং তার চিকিৎসা দরকার।

অনেক সময় বা দীর্ঘ সময় নিয়ে সিজিওফ্রেনিয়া রোগটি হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার শৈশব থেকে এই রোগের সৃষ্টি হতে ধীরে ধীরে রূপটি বাড়তে থাকে। একটি শিশুর পারিপার্শ্বিকতা যদি অসুস্থ হয়, কেউ যদি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে তবে সেই শিশু বা কিশোরকে খুব বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে করে তার মধ্য সিজিওফ্রিনিয়ার উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সেজোফ্রেনিয়া রোগের চিকিৎসা

একটি গবেষণায় দেখা গেছে সিজোফিনিয়ায় যারা আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ অসুস্থরাই চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়, 50% ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে যায়। এবং ২৫ পার্সেন্ট ব্যক্তিরা ভালো হয় না। তাই সেজোফ্রেনিয়ার রোগটি চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ মত যথাযথ চিকিৎসা অব্যাহত রাখা উচিত।

চিকিৎসকরা রোগীকে তার রোগের ধরন এবং বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নিয়মিত কতগুলো ওষুধ, কতগুলো মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল প্রয়োগ এবং উপদেশ দিবেন যেগুলো মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

সিজোফ্রেনিয়ার রোগের ক্ষেত্রে দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির রয়েছে। যথা-

১) ওষুধ প্রয়োগ।

২) সাইকো থেরাপি।

সাইকো থেরাপির মধ্য রয়েছে হেলোসিনেশন নিয়ন্ত্রণ, ফ্যামিলি থেরাপি, যোগাযোগের প্রশিক্ষণ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল ইত্যাদি।

অনেক সময় দেখা যায় ওষুধ প্রয়োগের পর ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলে পুনরায় আবার রোগটি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চিকিৎসা অব্যাহত রাখা উচিত।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মোঃ জহির উদ্দিন বলেছেন, সিজোফ্রেনিয়াকে পূর্বে বলা হত সাইকিয়াট্রির ক্যান্সার। এই বিশ্বাসটি এখনো অনেক মানুষের মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের সিজোফেনিয়া রোগের চিকিৎসা খুব একটা উন্নত না। তবে যতটুকু রয়েছে তা শুধুমাত্র ঔষধ প্রয়োগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। অনেকেই কবিরাজ ফকির, ওঝাদের কাছে এই রোগীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান এতে করে রোগীর ওপর আরো বেশি খারাপ প্রভাব সৃষ্টি হয়।

সিজোফ্রেনিয়ার রোগের চিকিৎসাকে সফল করতে হলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটিকে সনাক্ত করে চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সামাজিক মনোভাব পরিবর্তন করে রোগীর তার মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

সিজোফ্রেনিয়া রোগীর সংখ্যাগত অবস্থান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজির আহমেদ তুষার জানান,বাংলাদেশে সিজোফ্রেনিয়ার রোগের আক্রান্তর সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ।

স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট সিজোফ্রেনিয়া ডটকমের তথ্য অনুসারে, চীনে এ রোগের সংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ থেকে এক কোটি ২০ লক্ষ পর্যন্ত রয়েছে। ভারতে এই রোগের সংখ্যার 40 লাখ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মধ্যে মানুষের রোগ জনিত অক্ষমতার প্রথম দশটি কারণের একটি হচ্ছে সিজোফ্রেনিয়া। এতে আক্রান্তরা সম্মানহীন, বন্ধুহীন, আত্মীয়হীন হয়ে পড়ে বিধায় এদের জীবনযাপন খুবই অস্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে। এরা শারীরিকভাবেও অসুস্থতা বোধ করে। যদিও সিজোফ্রেনিয়ার রূপটি নির্ণয়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই। একজন রোগীর মধ্য অন্তত ছয় মাস সেজোফ্রেন এর উপসর্গ থাকলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তিটি এই রোগে ভুগছে।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

সিজোফ্রেনিয়া আসলে কি?

উত্তর: সিজোফ্রেনিয়া আসলে একটি মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণে এই রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

সিজোফ্রেনিয়া রোগের কারণ গুলো কি কি?

উত্তর: সিজোফ্রেনিয়া রোগের কারণ গুলো হলো: ক) বংশগত কারণ, খ) ব্রেইন কেমিস্ট্রি,গ) পরিবেশগত কারণ।

কাদের সিজোফ্রেনিয়ার রোগ হতে পারে?

উত্তর:নারী পুরুষ সহজে কোন ব্যক্তি সেজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।যেকোনো বয়সেই এই রোগটি হতে পারে সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে কিশোর বয়সে অথবা ২০ থেকে ২২ বছর বয়সে এবং নারীদের ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সে প্রথম দেখা দিতে পারে।

শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক পাঠিকা বন্ধুরা ইতোমধ্যেই আপনারা  সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলে যে সমস্ত বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোর সম্পর্কে আপনারা যদি বুঝতে পারেন এবং তা যদি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং যে কোন বিষয়ে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে অবগত করতে ভুলবেন না। সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহাফেজ।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url